পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (Polycystic Ovary Syndrome) কেন হয় এর লক্ষণ ও প্রতিকার জানুন
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (Polycystic Ovary Syndrome - PCOS) হলো একটি হরমোনজনিত সমস্যা, যা নারীদের প্রজননস্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। এটি মূলত ডিম্বাশয়ে একাধিক ছোট সিস্ট বা গুটিকা তৈরি হওয়ার কারণে হয়, যা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলাফল।
কারণ
PCOS-এর সঠিক কারণ পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে বেশ কয়েকটি বিষয় এটিকে উদ্দীপিত করতে পারে:- জেনেটিক কারণ: PCOS সাধারণত পরিবারের মধ্যে প্রভাবিত হতে দেখা যায়। মায়ের দিক থেকে যদি কারো PCOS থাকে, তাহলে তার সন্তানদের এ সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ইনসুলিন প্রতিরোধ: PCOS-এর সাথে ইনসুলিন প্রতিরোধ শক্তি সম্পর্কিত। ইনসুলিন হলো এমন একটি হরমোন যা শরীরের কোষকে রক্তে থাকা শর্করা ব্যবহার করতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়, তখন অগ্ন্যাশয় আরও বেশি ইনসুলিন তৈরি করে, যা ওভারির হরমোন উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে।
- অতিরিক্ত এন্ড্রোজেন: শরীরে পুরুষ হরমোনের (এন্ড্রোজেন) মাত্রা বেড়ে গেলে ডিম্বাশয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ডিম্বাণু তৈরি ব্যাহত হয়। এটি মাসিকের অনিয়ম ও শরীরে বিভিন্ন পুরুষালি বৈশিষ্ট্য (যেমন: মুখে অতিরিক্ত লোম গজানো) তৈরি করে।
- পরিবেশগত প্রভাব: খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার ধরণ এবং শরীরচর্চার অভাবও PCOS-এর একটি কারণ হতে পারে।
ক্ষতিকর দিক
PCOS শরীরে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে:- মাসিক অনিয়ম: PCOS-এর একটি প্রধান লক্ষণ হলো মাসিক চক্রের অস্বাভাবিকতা। মাসিক দেরি হওয়া, বা একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া PCOS-এর সাধারণ সমস্যা।
- বন্ধ্যাত্ব: ডিম্বাশয়ের ডিম্বাণু উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বন্ধ্যাত্বের সমস্যাও তৈরি হতে পারে। যেসব নারীর PCOS আছে, তাদের মধ্যে গর্ভধারণের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম।
- ওজন বৃদ্ধি: ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে। ওজন বৃদ্ধি হলে PCOS-এর অন্যান্য উপসর্গ আরও গুরুতর হয়।
- মানসিক সমস্যা: দীর্ঘস্থায়ী PCOS মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং আত্মসম্মানের অভাব দেখা দিতে পারে।
- অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি: PCOS ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ঘুমের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া, এটি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারে।
প্রতিকার
PCOS পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এর ব্যবস্থাপনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণভিত্তিক এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল।জীবনযাত্রার পরিবর্তন:
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম PCOS নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ওজন কমানোর মাধ্যমে ইনসুলিন প্রতিরোধের মাত্রা কমে এবং মাসিক চক্র নিয়মিত হয়।
- শরীরচর্চা: দৈনিক ৩০ মিনিটের ব্যায়াম শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
ঔষধ গ্রহণ:
- হরমোন থেরাপি: মাসিক নিয়মিত করতে এবং হরমোন ভারসাম্য রাখতে ডাক্তারের পরামর্শে হরমোনজনিত ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ইনসুলিন সেনসিটাইজার: ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে মেটফরমিনের মতো ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন:
- প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও কার্বোহাইড্রেট পরিহার করতে হবে। শাকসবজি, ফলমূল এবং সম্পূর্ণ শস্যের মতো পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা এবং হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করা যেতে পারে।
স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ:
- মানসিক চাপ PCOS-এর উপসর্গগুলোকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
এর থেকে বাঁচার উপায়
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার এবং কম চিনি গ্রহণ PCOS প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
- নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিনের শারীরিক কার্যকলাপ ইনসুলিন প্রতিরোধের মাত্রা কমায় এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: শরীরের আদর্শ ওজন বজায় রাখলে PCOS-এর ঝুঁকি কমে যায়।
- ডাক্তারি পরামর্শ: যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে PCOS-এর প্রাথমিক স্তরে ব্যবস্থাপনা করা যায়।
- স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ: মানসিক চাপ কমিয়ে শান্ত থাকা PCOS নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
PCOS একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হলেও সঠিক জীবনধারা এবং নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
.jpeg)

কোন মন্তব্য নেই